'রাজকুমার সিদ্ধার্থ থেকে বুদ্ধ'- এই পরিবর্তনের লক্ষণীয় বিষয়গুলো কী কী লেখো।
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
বুদ্ধত্ব লাভের পর তিনি চিন্তা করলেন তাঁর এ নতুন তত্ত্ব সাধারণ জাগতিক মানুষের চিন্তার অতীত। সুতরাং এই তত্ত্ব কার পক্ষে বোঝা সম্ভব। জগতে কে বুঝতে সক্ষম হবে সত্য তত্ত্ব। তারপর তিনি দিব্যদৃষ্টিতে চতুর্দিক অবলোকন করলেন। দেখলেন, সারনাথে জীবনের উৎস অনুসন্ধানী পাঁচজন সাধক আছেন। যারা একসময় তাঁর সহযোগী ছিলেন। তাঁদের উদ্দেশ্যেই তিনি যাত্রা করলেন।
আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে পৌঁছলেন সারনাথের ঋষিপতন মুগদাবে। সেখানে পাঁচজন সাধকের সঙ্গে একত্রিত হলেন, যাঁরা দীর্ঘকাল সেখানে সাধনারত ছিলেন। তিনি তাঁদের কাছে নতুন ধর্মতত্ত্ব প্রচার করলেন। পাঁচজন সাধক এই ধর্মতত্ত্ব উপলব্ধি করে যেন নতুন জীবন লাভ করলেন। তাঁরা বুদ্ধের কাছে দীক্ষা নিলেন। তাঁরা হলেন বুদ্ধের প্রথম শিষ্য। তাঁদের একত্রে বলা হয় 'পঞ্চবর্গীয় শিষ্য'। এই পাঁচজন ভিক্ষুর মাধ্যমেই বুদ্ধ প্রথম 'ভিক্ষুসঙ্ঘ' প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর শ্রেষ্ঠী কুমার যশ, যশের পিতা এবং ৫৪ জন সহযোগীকে বুদ্ধ ভিক্ষুসঙ্ঘে গ্রহণ করলেন। তিনি এই ৬১ জন ভিক্ষুকে চারদিকে প্রেরণ করেন ধর্ম প্রচার করার জন্য। এ সময় তথাগত বুদ্ধ নিজেও শিষ্য-প্রশিষ্যসহ বহু স্থানে পরিভ্রমণ করে তাঁর ধর্মতত্ত্ব প্রচার করেছেন। এভাবে দীর্ঘ ৪৫ বছর তিনি জীবজগতের কল্যাণের মহান ব্রত নিয়ে তাঁর অধিগত ধর্ম-দর্শন প্রচার করেন।
তথাগত বুদ্ধের ধর্মাদর্শ জগতে নতুন চেতনার সৃষ্টি করল। এই প্রথম মানুষ শুনল নিজের প্রচেষ্টাতেই তার ভবিষ্যৎ নিহিত। নিজের কর্মই নিজের ভবিষ্যৎ। অর্থাৎ, কর্মের মাধ্যমেই সৃষ্টি হবে ভবিষ্যতের সুখ-দুঃখ। এ রকম আত্মবিশুদ্ধিতার বার্তা নিয়ে প্রাচীন ভারতবর্ষে ঘুরে বেড়ালেন।
প্রচারিত হলো তাঁর ধর্মাদর্শ। এভাবে তিনি ৪৫ বছর ধর্ম প্রচার করেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি রাজগৃহ থেকে বৈশালী হয়ে কুশীনগর গমন করেন। কুশীনগরের কাছে পাবা নগরে উপস্থিত হয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পাবা থেকে তিনি মল্লদের শালবনে পৌঁছালেন। এ সময় তাঁর প্রধান সেবক আনন্দকে বললেন, তাঁর শয়নের ব্যবস্থা করতে। আনন্দ যমক শালগাছের নিচে শয্যাসন প্রস্তুত করলেন। তথাগত বুদ্ধ সেখানে শায়িত হলেন। তখন বৈশাখী পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। আনন্দকে বললেন, ভিক্ষুদের তাঁর কাছে সমবেত করতে। ভিক্ষুগণ শয্যার চার পাশে অঞ্জলিবদ্ধ হয়ে বসলেন। প্রধান শিষ্য আনন্দ কাছে এলেন। বুদ্ধ তখন তাঁর শেষ বাণী বললেন, 'হে ভিক্ষুগণ! উৎপন্ন হওয়া জীবমাত্রেরই ক্ষয় অবশ্যম্ভাবী। তোমরা সচেতন হয়ে অপ্রমাদের সঙ্গে নিজ নিজ কাজ করবে।' তথাগতের এ শেষ বাণী।
তারপর আস্তে আস্তে বুদ্ধ গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হলেন। রাতের শেষ যামে ধ্যানের চতুর্থ স্তরে পৌঁছে জগতের আলো বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। সপ্তাহব্যাপী তাঁর মরদেহ রাখা হয়। ভারতবর্ষের সব রাজন্য ও শ্রেষ্ঠী সমবেত হন মল্ল রাজ্যে। আয়োজন করা হয় মহা মর্যাদাপূর্ণ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের। বুদ্ধের অন্যতম শিষ্য আয়ুষ্মান মহাকাশ্যপ তাঁর চিতায় অগ্নিসংযোগ করেন। তারপর উপস্থিত সব রাজ্যের রাজন্যবর্গ তথাগত বুদ্ধের অস্থিধাতু ও চিতাভস্ম নিতে উদগ্রীব হন। তাঁর পূতাস্থিসমূহ ব্রাহ্মণ দ্রোণাচার্য আট ভাগ করেন। মগধরাজ অজাতশত্রু, বৈশালীর লিচ্ছবি, কপিলাবস্তুর শাক্য, অল্পকল্পকের বুলিয়, রামগ্রামরাজ্যের কোলিয়, বেঠদ্বীপের ব্রাহ্মণরাজ, পাবার মল্লরাজ, কুশীনারার মল্লরাজ পূতাস্থি গ্রহণ করেন। পরে পিপ্পলিবনের মৌর্যরাজ অস্থিধাতু না পেয়ে চিতাভস্ম গ্রহণ করেন। এগুলো প্রতিটি রাজ্যের রাজাগণ নিজ নিজ রাজ্যে স্তূপ নির্মাণ করে পূজার ব্যবস্থা করেন। বর্তমান বিশ্বে বুদ্ধের এই অস্থিধাতু ধর্ম, দর্শন ও ঐতিহ্যের দিক থেকে অমূল্য সম্পদ ও পরম শ্রদ্ধার বস্তু।
আরও দেখুন...